একটি মুরগীর আত্মকথা (শিশুতোষ গল্প)

ঘুমোতে যাবার আগে প্রতিদিন রাতে নাকীবের গল্পের বই পড়ার অভ্যাস। আমরা মাতা-পুত্র একসাথেই গল্প পড়ি প্রতিদিন। গত কয়েকদিন ধরে পড়ছিলাম একটি বাচ্চা মুরগীর আত্মকথা। একদম বাচ্চা মুরগীটির জন্ম লগ্ন থেকে গল্পটা শুরু হয়েছে। যখনই নাকীবের সাথে গল্প পড়ি ইচ্ছে করে গল্পটা নিয়ে লিখি। কারণ প্রতিটা গল্পেই শিক্ষনীয় অনেক কিছু থাকে। নাকীব একা একা পড়লে সেসব তেমন করে বুঝে নিতে পারবে না বলেই আমিও সাথে থাকি। যখনই একটা কিছু শিক্ষণীয় এসে যায় পড়তে পড়তে আমি সেখানে থেমে যাই। তারপর বিষয়টা নিয়ে নাকীবের সাথে আলোচনা করি। এভাবে গল্পের সেই শিক্ষাগুলো আলোচনার মাধ্যমেই নাকীব অনেক কিছু অনুভব ও উপলব্ধি করতে শিখে। এবং পরবর্তীতে সেগুলো কাজে লাগাতেও চেষ্টা করে মাশাআল্লাহ। আসলে শিক্ষা লুকানো, ছড়ানো আছে জীবনের সর্বক্ষেত্রেই। শিশুরা চঞ্চল তাই সেভাবে মনোযোগ দিয়ে দেখতে, পড়তে বা বুঝে নিতে পারে না। বাবা-মাদেরকেই তাদেরকে সাহায্য করতে হবে।
এক.
কারোলিনা নামে ছোট্ট বাচ্চা মুরগী ছিল। একদিন ঘুম ভেঙে যাবার পর নিজেকে কারোলিনা একটা বদ্ধ জায়গায় আবিষ্কার করে। জায়গাটা ছিল ভীষণ ছোট, চাপা এবং ঘুটঘুটে অন্ধকার। নড়াচড়া করতে পারছিল না কারোলিনা। বেশ গরম অনুভব করছিল এবং শ্বাস নিতেও যথেষ্ট কষ্ট হচ্ছিলো তার। প্রথমে কিছুক্ষণ কি করবে বুঝে উঠতে পারছিল না। সেখান থেকে বের হবার জন্য দরজা, জানালা কিছুই খুঁজে পেলো না। সে চিৎকার করে ডাকলো কিন্তু কেউ এলো না তাকে বের করে নিয়ে যাবার জন্য। কিছুক্ষণ এপাশ অপাশ করতে লাগলো অসহায়ের মতো। একসময় খেয়াল করলো তার ঠোঁট আছে। বেশ ধারালো এবং শক্ত সেই ঠোঁট। সাথে সাথে তার মাথায় বুদ্ধি খেলে গেলো এই ঠোঁট নিশ্চয়ই তাকে সাহায্যে করবে এখান থেকে বের হতে। সাথে সাথে ঠোঁট দিয়ে দেয়ালে আঘাত করতে শুরু করলো কারোলিনা। অনেকক্ষণ টুকটুক করে আঘাত করার পর একটু খানি ছিদ্র হলো। বাইরে থেকে মিষ্টি বাতাস ভেতরে প্রবেশ করলো। অসহ্যকর গরম কেটে যেতে লাগলো। কারোলিনার শ্বাস নেবার কষ্ট দূর হয়ে গেলো। অনেক স্বস্থি অনুভব করলো সে। এরপর ধীরে ধীরে সে ঠোঁট দিয়ে সেই ছোট্ট ছিদ্রটিকে বড় করতে শুরু করলো। এবং একসময় ততখানি বড় হয়ে গেলো সেখান দিয়ে সে বেড়িয়ে আসতে পারে।

***এইটুকু পড়ার পর নাকীবকে প্রশ্ন করেছিলাম, কি বুঝলে বাবা? নাকীব জবাব দিয়েছিল, কোন সমস্যা বা বিপদ এলে ঘাবড়ে না গিয়ে ঠান্ডা মাথায় সেখান থেকে বের হবার চেষ্টা করতে হবে। বললাম, হ্যা ভালোমতো ভেবে ও খুঁজে দেখলে কিছু না কিছু পাওয়াই যায় বিপদ থেকে বের হয়ে আসার মতো। তাই অস্থির বা হা-হুতাশ না করে চেষ্টা করতে হবে জীবনে আসা যে কোন বিপদ থেকে বের হবার।

দুই.
উপরের অংশটুকু ছিল ডিম থেকে কারোলিনার বের হবার কথা। ডিম থেকে বের হয়ে কারোলিনা তার মায়ের দেখা পেলো। মা তার দুই পাখনা মেলে কারোলিনাকে বুকে টেনে নিলো। তখন কারোলিনা আরো অনেকগুলো ডিম দেখতে পেলো। তার মা জানালো এইগুলোর মধ্যে তার ভাইবোন রয়েছে। কারোলিনা ভাইবোন কি জানতে চাইলে তার মা জানালো, ভাইবোন হচ্ছে তারা যারা তোমাকে অনেক ভালোবাসবে, তোমার খেয়াল রাখবে, তোমরা একসাথে খেলা করবে, যে কোন সমস্যার মোকাবিলা করবে। শুনে কারোলিনা অস্থির হয়ে গেলো তার ভাইবোনকে কাছে পাবার জন্য। সে ডিম ভেঙ্গে বের করে নিয়ে আসতে চাইলো তার ভাইবোনদেরকে। মা তখন কারোলিনাকে বুঝিয়ে বললো যে, তুমি যদি এমনটা করতে যাও তাহলে ডিম ভেঙ্গে যাবে আর তোমার ভাইবোনেরা মারা যাবে। জগতের সবকিছুর একটা নিয়ম আছে। সেই নিয়ম মেনে না চললে ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়। তাই তুমি যেমন একা একা বেড়িয়েছো তোমার ভাইবোনদেরকেও তাই করতে দাও। কারোলিনা তখন অধীর হয়ে অপেক্ষা করতে লাগলো তার ভাইবোনদের জন্য। হঠাৎ একটি ডিমে সামান্য নড়াচড়া দেখতে পেলো কারোলিনা। সে আনন্দে চিৎকার করে উঠলো তার প্রথম ভাই বা বোন বের হতে যাচ্ছে সেজন্য। এভাবে একে একে কারোলিনার বাকি নয়জন ভাইবোন বেড়িয়ে এলো।

***এই অংশটুকু থেকে নাকীবকে বুঝিয়েছিলাম যে, জগতে কিছু কাজ এমন আছে যা প্রত্যেকজন ব্যক্তিকে একাই করতে হয়। অন্য কেউ তাকে সেই কাজে সাহায্য করতে পারে না। তাই সবক্ষেত্রে অন্যের কাছ থেকে সাহায্য পাবার আশা যেমন রাখা যাবে না। তেমনি অন্যেকে সাহায্য করার চেষ্টাও করা যাবে না। কিছু কাজ শুধু ব্যক্তির নিজের।

তিন.
বেশ কয়েক মাস হেসে খেলেই চলে গেলো কারোলিনা ও তার ভাইবোনদের সময়। এরপর একদিন মা মুরগী তার দশ ছেলেমেয়েকে ডেকে বলল, আমার সোনা বাচ্চারা তোমরা আগে ছোট ছিলে তাই খেলাধূলা করেই সময় পার করেছো। কিন্তু এখন তোমরা বড় হয়েছো। আর মুরগীরা বড় হবার পর তাদেরকে অনেক কিছু শিখতে হয়, প্রস্তুতি নিতে হয়। ছোটবেলায় সবকিছু এক থাকলেও বড় হবার পর তোমাদের কেউ মুরগী হবে আর কেউ হবে মোরগ। তোমাদের আলাদা আলাদা দায়িত্ব পালন করতে হবে। আজ থেকে তাই তোমাদেরকে বেশি বেশি করে খেতে হবে। যাতে মুরগী হও কিংবা মোরগ যাতে নিজ দায়িত্ব খুব ভালো মত পালন করতে পারো। যাতে শারীরিক ভাবে তোমরা অনেক মোটা, তরতাজা হও। তোমাদের পালক লম্বা, কোমল ও সুন্দর হয়। তা না হলে কেউ তোমাদেরকে মুল্য দেবে না। তোমাদেরকে ছোট করে দেখবে, তোমাদেরকে নিয়ে হাসাহাসি করবে। তোমরা যদি চাও সবাই তোমাদেরকে সম্মান করুক তাহলে যারা মোরগ হবে তাদেরকে দেখতে যেমন সুন্দর হতে হবে, তেমনি অনেক শক্তিশালী কন্ঠস্বরের অধিকারীও হতে হবে। যাতে ভরাট কন্ঠের আওয়াজে সবার ঘুম ভাঙাতে পারে। যারা মুরগী হবে তাদেরকে বেশি বেশি ডিম পাড়তে হবে। এখন থেকেই তাই পুষ্টিকর ও তাজা খাদ্য খেতে হবে তোমাদেরকে। কারণ এই দুনিয়াটা অনেক কঠিন। যদি তোমরা যোগ্য না হও তাহলে কেউ তোমাদেরকে সম্মান করবে না।

*** গল্পের এই অংশটা খুবই চমৎকার লেগেছিল আমার কাছে। নাকীবকে বুঝিয়ে বলেছিলাম বড় ও শক্তিশালী হবার জন্য খাদ্যের প্রয়োজনীয়তার কথা। তাজা ফল-সবজি খেয়ে হবে বেশি বেশি শারীরিক ভাবে সুস্থ থাকার জন্য সেটা আবারো বুঝিয়ে বললাম। এরপর জিজ্ঞেস করেছিলাম, একজন মানুষ কিভাবে আদর্শ মানুষ হতে পারে? কিভাবে এতটা যোগ্য হতে পারে যাতে সবাই তাকে সম্মান করবে? নাকীব জবাব দিয়েছিল, অনেক অনেক পড়াশোনা করতে হবে একজন মানুষকে যোগ্য হতে হলে। জ্ঞানার্জনের প্রয়োজনীয়তা, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য আরেকবার বুঝিয়ে বলেছিলাম তখন।

চার.
এরপরের চ্যাপ্টারে মা মুরগী তার বাচ্চাদেরকে শিখিয়ে দিয়েছিল কিভাবে ভালো খাবার সংগ্রহ করতে হবে। সেজন্য যখনই তাদের মালিক খাবার দেবে তাদেরকে ছুটে গিয়ে সবার আগে ভালো খাবারটা খেয়ে নিতে হবে। কারোলিনা বলল, কিন্তু এমনটা করতে গেলে অন্যসব মুরগীদের সাথে প্রতিযোগিতায় যেতে হবে আমাদেরকে। তাদেরকে পেছনে ফেলে সামনে এগিয়ে যেতে হবে। এটা আমার পছন্দ না। মা মুরগী তখন বলল, যদি তুমি কাউকে পেছনে ফেলতে না চাও তাহলে অন্য সবাই তোমাকে পেছনে ফেলে সামনে এগিয়ে যাবে। কারণ তুমি পছন্দ না করলেও বাকি সবাই প্রতিযোগিতা পছন্দ করে। আর প্রতিযোগিতার মাধ্যমেই কাউকে জীবনে এগিয়ে যেতে হয়। মনে রেখো তুমি কাউকে আঘাত করা থেকে বিরত থাকলেও, অন্যকেউ কিন্তু যখনই সুযোগ পাবে তোমাকে আঘাত করবে। তাই তোমাকে সতর্ক থাকতে হবে অন্য কেউ তোমার কাছ থেকে কিছু ছিনিয়ে নেবার আগে যাতে তুমিই তার থেকে ছিনিয়ে নিতে পারো। কারোলিনার মোটেই পছন্দ হলো না মায়ের কথাটা। মনে মনে ভাবলো, নিজে বড় হবার জন্য অন্যকে পেছনে ফেলে, অন্যের খাবার ছিনিয়ে খেতে হলে, অন্যেকে আঘাত করতে হলে বড় না হওয়াই ভালো। এছাড়া কিভাবে সবার চেয়ে আকর্ষনীয় মুরগী হওয়া যায় সেজন্য অনেক নিয়ম বেঁধে দিয়েছিল মা মুরগী সবাইকে। তারা আগে ইচ্ছে মতো ঘুরে বেড়াতো, খেলাধূলা করতো সেসব কিছুই বন্ধ করে দিলো। কারোলিনা খুবই ব্যথিত হয়ে ভাবতে লাগলো বড় হওয়া মানে কি জীবনের সব হাসি-আনন্দ, স্বাধীনতা ত্যাগ করে দেয়া? কোনদিন বড় হতে চায় না এমন ইচ্ছে চেপে বসলো কারোলিনার মনে।

*** গল্পের এই অংশটা আমার কাছে সবচেয়ে বেশি কঠিন মনে হয়েছে। বিশেষ করে যখন বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে চিন্তা করেছিলাম তখন। বাবা-মায়েরা তাদের সন্তানদেরকে অনেকটা মা মুরগীর মতই শিক্ষা দেয় না কি? সারাক্ষণ বাচ্চাদের মধ্যে চলে প্রতিযোগিতা। অন্যেকে পেছনে ফেলে সামনে এগিয়ে যাবার প্রতিযোগিতা। আশেপাশে না তাকিয়ে শুধু নিজের ভালোর চিন্তায় মগ্ন থাকার স্বার্থপরতার বীজ কি এভাবেই বুনে দেয় না শিশুদের কচি প্রাণে?! এই চ্যাপটারটা নিয়ে নাকীবের সাথে আমি আলোচনা করিনি। কারণ যেহেতু এমন প্রতিযোগিতার সাথে নাকীব পরিচিত নয়। তবে শুধু এটুকু বলেছিলাম, তোমাকে অনেক অনেক জ্ঞানার্জন করতে হবে। এবং সবসময় চেষ্টা করতে হবে যাতে প্রতিদিন কোন না কোন ভালো কাজ করতে পারো। যাতে একটু একটু করে অনেক ভালো একজন মানুষ হবার লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে পারো সামনে।

 

পাঁচ.

একসময় ছোট থেকে ধীরে ধীরে বড় হতে হতে ডিম পাড়ার বয়সি হয়ে গেলো কারোলিনা। তখন কারোলিনাকে ফার্মের যেখানে অন্যান্য মুরগীরা ডিম পারে সেখানে নিয়ে যাওয়া হলো। প্রথম প্রথম কয়েকদিন তো কিছুই ভালো লাগতো না কারোলিনার। একসময় নতুন জায়গার সাথে নিজেকে মানিয়ে নিলো। তখন সে অন্যান্য সঙ্গীদের দিকে মনোযোগ দিলো। কে কেমন সেটা পর্যবেক্ষণ করতে গিয়ে দেখলো কিছু মুরগী আছে অনেক মোটা তাজা ও শক্তিশালী। আর কিছু মুরগী খুবই দুর্বল এবং একদম শুকনা। কারোলিনা খেয়াল করে দেখলে যে যখনই খাবার দেয়া হয় মোটা তাজা মুরগী গুলো ঝাপিয়ে পড়ে সব ভালো খাবার খেয়ে ফেলে। অল্প কিছু যা বাকি থাকে সেসব ভাগে পায় দুর্বল মুরগীগুলো। তাই তাদের এই করুণ দশা। কারোলিনা সিদ্ধান্ত নিলো কিছুতেই এমন চলতে দেয়া যাবে না। এই অন্যায়ের প্রতিরোধ করতে হবে। এবং ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা করতে হবে। সে সব দুর্বল মুরগীদের একসাথে করে বলল, তোমরা যদি প্রতিবাদ না করে এমন চুপ করে থাকো তাহলে সারাজীবনই এমন দুর্বলতার জীবনই কাটাতে হবে তোমাদেরকে। তাই তোমরা সবাই একসাথে এই অন্যায়ের প্রতিবাদ করো। শোন আমি বলে দিচ্ছি কি করতে হবে। এখন থেকে খাবার আসার সাথে সাথে তোমরা সবাই একসাথে ঝাপিয়ে পড়বে খাবারের উপর। তাজা মুরগীদের সুযোগই দেবে না ভালো খাবার খেয়ে ফেলার। দুর্বল মুরগীরা ঠিক তাই করলো। এরফলে প্রথম দু’এক দিন সবল মুরগীরা তাদেরকে ঠোঁট দিয়ে আঘাত করে প্রতিহত করার চেষ্টা করলেও তাদের এক জোট প্রতিবাদের বিরুদ্ধে নতি স্বীকার করে নিলো। এবং যে অন্যায় আচরণ তারা করছিল দুর্বলদের প্রতি সেটা বন্ধ করে দিলো।

*** আমি কিছু বলার আগেই নাকীব বলেছিল, সবসময় অসহায় ও দুর্বলদের সাহায্যে করতে হবে। অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে হবে। আমি হেসে বলেছিলাম, হ্যা। আর অন্যায়ের প্রতিবাদ করার জন্য কখনো যদি কঠোর হতে হয় তাহলে অবশ্যই হবে। মনে পড়ে গিয়েছিল একটা কথা প্রসঙ্গে ভাইয়া আমাকে বলেছিলেন, তোমার নিয়্যাত সহিহ থাকলে লক্ষ্যে অর্জনের জন্য একটু বাঁকা পথও যদি অবলম্বন করতে হয় তাহলে অবশ্যই করবে। এবং নিঃসংকোচে সেটা করবে।

ছয়.

একদিন কারোলিনার মা মুরগী তার সাথে দেখা করতে এলো। মা মুরগী কিছু মুরগীর দিকে ইঙ্গিত করে কারোলিনাকে বলল, দেখো কারোলিনা এরা হচ্ছে সেই সব মুরগী যারা সপ্তাহে সাতদিনই একটি করে ডিম পাড়ে। কারোলিনা জানতে চাইলো এরা তাহলে ছুটি কাটায় কবে? মা মুরগী জবাব দিলো, এরা কখনোই ছুটি কাটায় না। এরা ভালো ভালো খাবার খায়, পেটের মধ্যে ডিম তৈরি করে এবং তারপর সেই ডিম পাড়ে। কারোলিনা অবাক হয়ে বলল, তারমানে ওরা কখনোই রোদ পোহাতে বাইরে যায় না? খোলা আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখে না? পাখনা মেলে নিজে উড়ার চেষ্টা করে না? প্রকৃতির রঙ, রূপ বদলের বৈচিত্র্যতা উপভোগ করে না? মা মুরগী বিরক্ত কন্ঠে বলল, না। কিন্তু ওরা রোজ ডিম পাড়ে তাই ওরা ফার্মের সবচেয়ে মূল্যবান মুরগী। এসো তোমাকে আমি ফার্মের সবচেয়ে মূল্যবান মুরগীটিকে দেখেচ্ছি। ঐ দেখো। জানো ঐ মুরগীটা দিনে দুইটা করে ডিম পাড়তো আগে। কিন্তু গতকাল থেকে তিনটা করে ডিম পাড়া শুরু করেছে। ওর মা আমার বান্ধবী। মেয়ের গর্বে সে মাথা উঁচু করে হাঁটে। কারোলিনা আমিও চাই তুমি এমন হও। তুমিও এমন তিনটা করে ডিম পাড়ো দিনে। যাতে আমি গর্ব করে বলতে পারি আমার বান্ধবীদের কাছে। কারোলিনা কিছুক্ষণ মায়ের দিকে তাকিয়ে থেকে বলল, আমি সপ্তাহে তিনটের বেশি ডিম পাড়তে চাই না। একদিন ডিম পাড়বো আরেকদিন বিশ্রাম নেবো। আর একদিন আমার ছুটি। আমার যা ইচ্ছে তাই করবো, যেখানে মন চায় ঘুরে বেড়াবো। মা মুরগী প্রথমে খুব রেগে গেলো কারোলিনার কথা শুনে এরপর বলল, তুমি আমাদের পরিবারের রেপুটেশনের কথা ভুলে যাচ্ছো কারোলিনা। আমাদের পরিবারের সব মুরগীর সপ্তাহে সাতদিন ডিম পাড়ার রেকর্ড। এটা তুমি কিছুতেই ভাঙতে পারো না। কারোলিনা মা মুরগীর কথার কোন জবাব না দিয়ে দিনে তিনটি ডিম পাড়া সেই মুরগীটার দিকে তাকিয়ে রইলো। মুরগীটিকে ভীষণ ক্লান্ত ও পরিশ্রান্ত দেখাচ্ছিল। যে দুর্বল ভাবে এক জায়গায় চুপ করে বসে ছিল। তার চোখের ভেতরে কারোলিনা কোন প্রানোবন্ততা, উচ্ছলতা কিছুই খুঁজে পেলো না। একরাশ চাপা বেদনা ভেসে বেড়াতে দেখলো শুধু। সাথে সাথে কারোলিনা সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলো যে, সে কখনোই এই মুরগীটির মত জীবন বেছে নেবে না। সে শুধু পরিবারের সম্মান বাঁচানোর জন্য জীবন যাপন করবে না। সে কাজ করবে এবং জীবনকে উপভোগও করবে।

*** গল্পের এই অংশটুকু থেকে শিক্ষা আসলে আমাদের পিতা-মাতাদের নেয়া উচিত। মা মুরগীর মত পরিবারের রেপুটেশন, অন্যের কাছে সন্তানকে নিয়ে গর্ব কিংবা সন্তানের সুন্দর ভবিষ্যৎ ইত্যাদির ভাবনায় ডুবে থেকে আমরা ভুলেই যাই সন্তান কি চায়। নিজেদের সাধের বোঝা চাপিয়ে দেয়ার আগে সন্তানদের সাধ্যে জেনে নেয়া উচিত। জীবনকে ঘিরে তাদের স্বপ্ন ও ইচ্ছেকেও মূল্যায়ন করা উচিত। নয়তো আমরা হয়তো সন্তানকে নিয়ে গর্বে মাথা উঁচু করে পথ চলবো। কিন্তু আমাদের সন্তানদের চোখে ভেসে বেড়াবে শূন্যতা জড়ানো হাহাকার!

সাত.

যে খামারে কারোলিনা থাকতো সেখানে মোট চারটি মোরগ ছিল। তারমধ্যে একটি মোরগ ছিল খুবই সুদর্শন। তার ভাবভঙ্গী সবকিছুই ছিল অন্যরকম। মোরগটির নাম ছিল মারকেস। খামারের সব মুরগীর আকর্ষনের পাত্র ছিল মারকেস। কিন্তু কারোলিনার মোটেই ভালো লাগতো না মারকেসকে। কারণ সে শুধু দেখতেই সুন্দর ছিল। এছাড়া সারাক্ষণ খেতো, ঘুমাতো আর ঘুরে বেড়ানো ছাড়া আর কোন কাজ করতো না। একদিন কারোলিনা নিজের মনে বাগানে ঘুরছিল তখন মারকেস তার কাছে এসে বলল, কারোলিনা তুমি এই ফার্মের সবচেয়ে সুন্দর মুরগী। আমাকে সব মুরগীরা পছন্দ করে কিন্তু আমি শুধু তোমাকে পছন্দ করি। তোমাকে বিয়ে করে আমার রাণী বানাবো। আচ্ছা শোনো তুমি এই কথা অন্য কোন মুরগীকে আবার বলো না। এই কথাটা শুধু তোমার আর আমার ভেতর থাকবে। মারকেসের কথা শুনে কারোলিনা মোটেই আনন্দিত বোধ করলো না। একটি অলস মোরগ সে দেখতে যতই সুন্দর হোক না কেন তার রাণী হবার কোন শখ কারোলিনার ছিল না। পরদিন কারোলিনা শুনতে পেলো মারকেস তাকে যে কথাগুলো বলেছে হুবহু সেই কথাগুলোই অন্য আরেকটি মুরগীকে বলছে। পরদিন একই কথা অন্য আরেকটি মুরগীকে বললো। এভাবে যখনই যে মুরগীকে একা পেতো মারকেস তাকে এসব বলে সেই মুরগীর সাথে ভাব জমাতে চেষ্টা করতো। ফার্মের সব মুরগীই এমন মনে মনে মারকেসের রাণী হবার স্বপ্ন বুনতে লাগলো। কারোলিনা চুপচাপ সবই শুনতো আর দেখতো। অবশেষে একদিন কারোলিনা মারকেসের এই মিথ্যাচার সব মুরগীদেরকে খুলে বললো। ফার্মের সব মুরগী তখন ঝাঁপিয়ে পড়লো মারকেসের উপর। ঠুকরে মারকেসের সুন্দর পালক ঝরিয়ে দিলো। সবাই মিলে অনেক অনেক ভৎসনা করলো মারকেসকে। মারকেস অপমানিত ও লজ্জিত হয়ে পালিয়ে গেলো।

*** গল্পের এই অংশটুকুর শিক্ষা ছিল মিথ্যা কখনোই গোপন থাকে না। একদিন না একদিন সেটা সামনে বেড়িয়ে আসেই। এবং তখন মিথ্যাবাদীকে অপমানিত ও লজ্জিত হতে হয়। আরেকটি শিক্ষণীয় বিষয় ছিল কারো সুন্দর ও মিষ্টি কথায় বিশ্বাস করার আগে যাচাই করে নেয়া উচিত। কেউ দেখতে সুন্দর বা সুন্দর কথা বলে এর অর্থ এটা নয় যে সে ব্যক্তি হিসেবেও ততটাই ভালো।

আট.

কারোলিনার মনটা ছিল ভীষণ নরম ও কোমল। সবাই যখন মারকেসকে অনেক অপমান করলো এবং লজ্জিত হয়ে মারকেস চলে গেলো। কারোলিনার তখন অনেক মায়া হলো মারকেসের জন্য। সে সব মুরগীদেরকে ডেকে বলল, মারকেস খুবই অন্যায় করেছে এবং তোমরা ওকে শাস্তিও দিয়েছো। এখন ও নিজের ভুল বুঝতে পেরেছে এবং প্রায়শ্চিত করতে প্রস্তুত হয়েছে। তোমরা ওকে মাফ করে দাও। কিন্তু কেউই রাজী হলো না মারকেসকে মাফ করতে। উল্টো সবাই মারকেসের অবস্থা দেখে খুব হাসাহাসি করতে লাগলো। ধোঁকাবাজের উচিত শিক্ষা হয়েছে বলে ব্যাঙ্গ করতে লাগলো। মারকেস তখন মনের দুঃখে একটি গাছের উপর চড়ে বসলো। সে ঠিক করলো যে পর্যন্ত আবারো তার গায়ে পালক না উঠবে সেই পর্যন্ত গাছেই থাকবে। গাছের কচি পাতা খেয়ে মারকেস দিন কাটাতে লাগলো। আর নিজের ভুল ও অন্যায়ের জন্য অনুশোচনায় দগ্ধ হতে লাগলো। ধীরে ধীরে আবারো মারকেসের গায়ে পালক উঠতে শুরু করলো। এই পুরো সময়ে কারোলিনা মারকেসের খোঁজ খবর নিয়েছে। তাকে সান্ত্বনা দিয়েছে, উৎসাহ যুগিয়েছে। মারকেসের পালক যখন বড় হলো দেখা গেলো সেগুলোর রঙ গাঢ় সবুজ। মারকেস আগের চেয়েও অনেক সুন্দর একটি মোরগে পরিণত হলো। কারোলিনার অনুরোধে একসময় সব মুরগীরা মারকেসকে মাফ করে দিলো। এরপর মারকেস খুবই ভালো একটি মোরগ হয়ে গেলো। সে কারোলিনার সাথে বন্ধুত্ব করতে চাইলে খুশি মনেই রাজী হলো কারোলিনা। মারকেসকে কারোলিনা বলল, এরআগে আমি তোমার সাথে বন্ধুত্ব করতে চাইনি কারণ তুমি শুধু বাইরে দিয়েই সুন্দর ছিলে। কিন্তু তোমার ভেতরটা খুবই কুৎসিত ছিল। কিন্তু এখন তুমি বাইরে যেমন সুন্দর, ভেতরেও তেমন সুন্দর। বন্ধু হিসেবে আমার এমন কাউকেই পছন্দ যার শুধু বাহির নয় বরং ভেতরটা বেশি সুন্দর।

*** গল্পের এই অংশটুকুর মধ্যে অনেকগুলো শিক্ষা লুকিয়ে রয়েছে। ১. কেউ অন্যায় করে মাফ চাইলে তাকে মাফ করে শুধরে নেবার সুযোগ দেয়া উচিত। ২. কেউ যদি নিজের ভুল থেকে বেড়িয়ে আসতে চায়। সেই পথে তাকে উৎসাহ যোগানো উচিত। ৩. বার বার তার দোষের কথা মনে করিয়ে দিয়ে তাকে নিরাশ করা উচিত নয়। ৪. কেউ প্রায়শ্চিত করে ফিরে আসার পরে তাকে বন্ধু হিসেবে কাছে টেনে নেয়া উচিত। আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা হচ্ছে, কারো শারীরিক বা বাহ্যিক সৌন্দর্যের চেয়ে বেশি জরুরী হচ্ছে অভ্যন্তরীণ বা মানসিক সৌন্দর্য।

 

গল্পটির শেষে দেখানো হয়েছিল কারোলিনা খুব আনন্দময় জীবন যাপন করছে। সে নিজের দায়িত্ব পালন করতো, নিজের খুশির জন্য ডানা মেলে উড়ার চেষ্টা করতো, রোদ-বৃষ্টি উপভোগ করতো, প্রকৃতির কাছে যেত, মন খুলে হাসতো, আশেপাশের সবাইকে সাধ্য অনুযায়ী সাহায্য করতো। কেউ অন্যায় করলে তাকে ধমকে দিতো গম্ভীর কন্ঠে, আবার মায়া জড়ানো স্বরে বুঝিয়েও বলতো। সপ্তাহে সে তিনটি ডিম পাড়তো। কারোলিনা ঠিক তেমন জীবন বেছে নিয়েছিল যেমনটা সে নিজে চেয়েছিল। সে কাউকে দেখানোর জন্য, কারো কাছে বড় হবার জন্য নিজের জীবন কাটাতে রাজী হয়নি। পরিবারের রেপুটেশন বা রেকর্ড ধরে রাখার জন্য নিজের উপর জুমুলও করেনি। যারফলে জীবনের সর্বত্র সে শুধু তৃপ্তি খুঁজে পেয়েছে। তার মনে কোন হাহাকার ছিল না, অস্থিরতা ছিল না। সবার চেয়ে এগিয়ে যাবার আকাঙ্ক্ষা ছিল না। তাই পিছিয়ে পড়ায় আতঙ্কও ছিল না। কারোলিনার নিজের যা আছে, সেটুকু আছে সেটুকু নিয়েই আত্মতুষ্ট একটি সুখী মুরগী ছিল।

গল্পটা শেষ হবার পর নাকীবের দিকে তাকিয়ে বলেছিলাম, বাবাটা আমি কারোলিনা হতে চাই। নাকীবও হাসতে হাসতে বলেছিল, আম্মুতা আমিও কারোলিনা হতে চাই। আমি ওর হাত ধরে আশ্বাস জাগানিয়া কন্ঠে বলেছিলাম, ইনশাআল্লাহ কারোলিনার মত নিজের যা আছে যেটুকু আছে সেটুকু নিয়ে এক তৃপ্তিময় জীবন গঠন করার ক্ষেত্রে বাবা আর আম্মুতা তোমাকে সাধ্যমতো সাহায্য ও সহযোগিতা করবে। বাবা-আম্মুতা কখনোই তোমাকে মানুষকে দেখানোর জন্য কিছু করতে বলবে না। কারো উদাহরণ টেনে তোমাকে তার সাথে প্রতিযোগিতায় নামতে বলবে না। পরিবারের বোঝা তোমার ছোট্ট কাঁধের উপর চাপিয়ে দেবে না ইনশাআল্লাহ। বাবা-আম্মুতা তোমাকে শিখিয়ে দেবে কিভাবে নিজের সাথে প্রতিযোগিতা করতে হয়! কিভাবে প্রতিদিন একটু একটু করে নিজেকে বিকশিত করতে হয়! কিভাবে নিজের দুর্বলতা সমূহকে জয় করতে হয়! কিভাবে সর্বক্ষেত্রে শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টি কথা স্মরণ রেখে একজন আদর্শ মানুষ হতে হয়।

আড়াই মাসের জন্য দেশে গিয়ে খুব কষ্টকর যেসব অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করে নিয়ে এসেছিলাম। তারমধ্যে ছোট্ট ছোট্ট শিশুরা মাথায় বিশাল সব দায়িত্বের বোঝা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে এটিও ছিল। উন্নত ভবিষ্যৎ গড়ার লক্ষ্যে বইয়ের মধ্যে আকন্ঠ ডুবে থাকা শিশুদের দেখে দমবন্ধকর অস্বস্থি ঘিরে ধরেছিল মনকে। মনেহচ্ছিলো আসলেই এক আত্নবিস্মৃত জাতির কর্ণধার এরা। এরা জানেই না কি করছে, কিসের জন্য করছে, এরফলে কি পেতে যাচ্ছে আর কি হারাতে হারাতে এগিয়ে যাচ্ছে সম্মুখ পানে। ভবিষ্যতের সুন্দর জীবনটা আসলে কার জন্য? যদি অন্য মানুষেদেরকে দেখানোর জন্য হয়ে থাকে তাহলে আসলে কিছুই বলার নেই। কিন্তু যদি নিজের জন্য হয়ে থাকে তাহলে প্রশ্ন জাগে, নিজের জন্য বাঁচতে কি শিখছে এই শিশুরা? ওরা কি জানে ওদের স্বপ্ন, ইচ্ছে, ভালোলাগা, মন্দলাগা? আজ যারা নিজেকে জানে না, কাল কি তারা অন্যেকে জানার চেষ্টা করবে? আজ যাদের আবেগ বিকশিত হতে পারছে না, কাল কি তারা অন্যের আবেগ বুঝবে? বুঝলেও কদর কি করবে পারবে? যেখানে তার নিজের আবেগ ছিল সর্বদা অবহেলিত?

গত মাসে ক্লাস টেষ্টে সাধারণ বিজ্ঞান পরীক্ষায় নাকীব ১০ শে ৯ পেয়েছে। কেন ১ কম পেয়েছে জানতে চাইলে নাকীব বলল, এক জায়গায় পেনিসিলিন হবে সে ভুলে অ্যান্টোবায়োটিক লিখেছে। বললাম, এমন ভুল কেন হলো? তোমার তো খুব ভালো করে সব কিছু জানা ছিল! নাকীব জবাব দিলো, আম্মুতা মানুষের ভুল হতেই পারে। আমি তো ইচ্ছে করে ভুল করিনি। ভুল করে ভুল হয়ে গিয়েছে। কিন্তু আমি তো আসলে জানি যে সঠিকটা কি। কিন্তু ভুলে আরেকটা লিখে ফেলেছি। প্রফের কাছে পেপার জমা দেবার পরই আমি বুঝতে পেরেছিলাম একটা ভুল লিখেছি। এটা তো কোন ব্যাপার না তাই না আম্মুতা? কারণ আমি সঠিকটা জানি এটা হচ্ছে ব্যাপার। আমাকে চুপ থাকতে দেখে আবার বলল, তুমিই তো বলেছিলে পরীক্ষায় ফাস্ট, সেকেন্ড হওয়াটা কোন ম্যাটার না! ম্যাটার হচ্ছে তুমি কতটুকু পড়েছো, শিখেছো, জেনেছো এবং জীবনে কাজে লাগাতে চেষ্টা করছো। আমি তো সব পড়েছি, শিখেছি, জানি আর কাজেও লাগাই। এজন্যই তো আমি এত গুড বয় মাশাআল্লাহ। আমি তখন নাকীবের দিকে তাকিয়ে মিষ্টি করে হাসি দিয়ে আলহামদুলিল্লাহ বলেছিলাম।

আমার কাছে নাম্বারটা কখনোই কোন ম্যাটার না। নাকীব আসলে বেশির ভাগ সময়ই ভুল করে বেখেয়ালের কারণে। আর দু’ এক সময় ভুল করে ওভার কনফিডেন্সের কারণে। তাই যখন নাম্বার কম পায় জানতে চাই সমস্যাটা আসলে কোথায় হয়েছে এবার। নয়তো পরীক্ষায় ফাস্ট হবার চেয়ে আমার কাছে বইয়ের ভেতর থাকা বিষয়গুলো সম্পর্কে যথাযথ জ্ঞানার্জন করাটা বেশি জরুরি। এবং সেই অর্জিত জ্ঞানানুযায়ী কাজ করাটা জরুরী। নাকীব ফাস্ট হবে এটার চেয়েও আমার কাছে গুরুত্ব বহন করে নাকীব শিক্ষিত হবে। ততটা শিক্ষিত যতটা হলে চলার পথে নিজের করনীয়-বর্জনীয় নির্ধারণ করতে পারবে, নিজের ভুলগুলো বুঝে, শুধরে নিতে পারবে। আমার কাছে মনেহয় যে, বাবা-মার দায়িত্ব আসলে এখানটাতেই। সন্তানদেরকে সঠিক পথ প্রদর্শন করা। সেই পথে তাদেরকে অব্যহত ভাবে চলতে সাহায্য করা। চলার পথে অজ্ঞানতা, কখনো বা অতি বিশ্বাসের কারণে ভুল করলে সেটা শুধরে দেয়া। সন্তানকে স্বাধীনতা দেয়া নিজের ইচ্ছা অনুযায়ী তাদের জীবনকে উপভোগ করার। অন্যেরা কি বলবে সেই চিন্তায় সন্তানদের জীবনকে পরিচালিত করা থেকে বিরত হওয়া উচিত বাবা-মায়েদের।

জীবনটা যার যোগ্যতা ও দক্ষতা অনুযায়ী যাতে সে নিজ জীবনকে কাজে লাগিয়ে জীবনের মূল লক্ষ্যের পানে একটু একটু করে এগিয়ে চলতে শেখে সেই ব্যাপারে সহায়তা করাই আসলে পিতা-মাতার দায়িত্ব। আর প্রতিযোগিতা যদি শেখাতেই হয় সন্তানকে তাহলে সেটা যাতে নিজের সাথে করে সেটা বুঝিয়ে দিতে হবে। কারণ এই পৃথিবীতে মানুষ ভালো মন্দ যা কিছুই করে তার ফল তাকেই ভোগ করতে হয়। তাই মানুষের উচিত সব কাজ নিজের জন্য করা। কারো সাথে মোকাবেলা করার জন্য নয়। সবসময় শুধু আল্লাহর সন্তোষ আর অসন্তোষের কথা মনে রেখে যাতে নিজের সাধ্যানুযায়ী কাজ করে সেই শিক্ষা দিতে হবে সন্তানদেরকে। কাউকে দেখিয়ে দেয়া, হারিয়ে দেয়া যেন কখনোই তাদের ইনটেনশন না হয়। কারণ অন্যকে দেখাতে গিয়ে বা হারাতে গিয়ে মানুষ নিজের অনেক কিছুই হারিয়ে ফেলে। আর কোন পিতা-মাতার চাওয়াই এমনটা হতে পারে না যে, তাদের সন্তান নিজেকে হারিয়ে ফেলবে প্রতিযোগীদের ভিড়ে। কারণ এভাবেই এক সময় মানুষের ভেতরে রিয়া ঢুকে যায়। তখন মানুষকে না দেখিয়ে সে আর কিছুই করতে পারে না। তাই ছোটবেলা থেকেই শিক্ষা দিতে হবে যেন কখনোই মানুষকে দেখানোর জন্য কিছু না করে। যা কিছু করবে সেটা যেন নিজের জন্য করে। এবং একমাত্র লক্ষ্য যেন থাকে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন।

Leave a comment